বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৩০ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
ইউক্রেন সঙ্কট : নবরূপে শীতলযুদ্ধ

ইউক্রেন সঙ্কট : নবরূপে শীতলযুদ্ধ

স্বদেশ ডেস্ক:

জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও ইতিহাসের প্রফেসর জেমস হার্শবাগ ইউক্রেন সঙ্কট নিয়ে বলেছেন, ‘এটা অনেকটা শীতলযুদ্ধের প্রতিধ্বনি’। লড়াইটা আদতে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে রাশিয়ার সেই পুরনো আধিপত্যের লড়াইয়ের ধারাবাহিকতা। মস্কো-ওয়াশিংটন দ্বন্দ্বের অসহায় শিকার ইউক্রেন। তা ছাড়া এটাও পরিষ্কার যে, ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্য করার টোপ দিয়ে জেলেনস্কিকে যুদ্ধে প্ররোচিত করেছিল যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা শক্তি। যুদ্ধ শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্র বা ন্যাটো, কেউই কিন্তু ইউক্রেনের পক্ষে সামরিক পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে আসেনি। জেলেনস্কি আক্ষেপ করে বলেছেন, ‘আমরা একাই লড়ছি, কেউ আমাদের পাশে নেই’। এমনকি ন্যাটোকে যখন ইউক্রেনের আকাশে নো-ফ্লাই জোন করতে বারবার আহ্বান জানান জেলেনস্কি, তখন তাতেও অস্বীকৃতি জানায় পশ্চিমা ন্যাটো। এ ছাড়া খোদ বাইডেন বলেছেন, তিনি ইউক্রেনে সেনা পাঠিয়ে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে জড়াতে চান না। তবে পূর্ব ও উত্তর ইউরোপের ন্যাটোভুক্ত রাষ্ট্রগুলোকে সম্মিলিত পূর্ণ শক্তি দিয়ে রক্ষা করবেন। (১ মার্চ ২০২২, সিএনএন) বাইডেনের বক্তব্যে স্পষ্ট, ন্যাটোতে নেয়ার ব্যাপারে ইউক্রেনকে হিসাবের মধ্যেই এখন আর ধরা হচ্ছে না।

সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর সামরিক জোট ওয়ারশ প্যাক্টও বিলুপ্ত হয়ে যায়। কিন্তু স্নায়ুযুদ্ধের অবসান ঘটলেও ন্যাটো অটুট থাকে। সর্বশেষ সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচেভের সাথে একটা সমঝোতা হয়েছিল যে, পূর্ব ইউরোপের দিকে ন্যাটোর বিস্তার ঘটানো হবে না। একটা সময় পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র সেই সমঝোতা মেনে চললেও পরে প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি ও চেক রিপাবলিককে ন্যাটোতে নিয়ে নেন। তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র পূর্ব ইউরোপের দিকে ন্যাটোর সম্প্রসারণ ঘটাতে থাকে, যা মস্কোর জন্য হুমকি হিসেবে দেখা দেয়। যেমনটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পশ্চিম গোলার্ধে অন্য কোনো পরাশক্তির সামরিক উপস্থিতি সহ্য করে না।

২০০৮ সালে ন্যাটোর সদস্যপদের আবেদন করে ইউক্রেন। ২০২০ সালের ১২ জুন ইউক্রেনকে ‘সহযোগী দেশ’ করে নেয় ন্যাটো। রাশিয়ার দুয়ারে ন্যাটোর এমন ‘বিপজ্জনক তৎপরতা’র পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালে পুতিন ভূকৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ ক্রিমিয়া দখল করে নেন। তখন থেকেই ইউক্রেনের সাথে মস্কোর সঙ্কট ঘনিয়ে ওঠে। তখন থেকে ন্যাটো পূর্ব ইউরোপে সামরিক তৎপরতা আরো বাড়ায়। পুতিন অনেকবার যুক্তরাষ্ট্রকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, যাতে ন্যাটো পূর্ব ইউরোপে সামরিক উপস্থিতি না বাড়ায়। কিন্তু না, যুক্তরাষ্ট্র বরং সার্বভৌমত্বের দোহাই দিয়ে ন্যাটোতে যোগদানের জন্য ইউক্রেনকে উৎসাহিত করে। এসব কারণেই শেষ পর্যন্ত পুতিন ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন চালাতে বাধ্য হন। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা গোষ্ঠীর দায় আছে। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামফোসা রাশিয়ার আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন সমর্থন না করলেও ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য ন্যাটোকেই দায়ী করেছেন। তবে সন্দেহ নেই, পুতিন ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব পদদলিত করেছেন। কিন্তু সেই সাথে পশ্চিমাদের এ প্রশ্নেরও মুখোমুখি হওয়া উচিত, মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো যখন ইরাক, লিবিয়া ও কসোভো-সার্বিয়াতে আগ্রাসন চালিয়ে যুদ্ধাপরাধ করেছিল, তখন ওই দেশগুলোর সার্বভৌমত্বের প্রতি এ দরদ কোথায় ছিল!

ইউক্রেনে রুশ হামলার ঠিক আগেই নোয়াম চমস্কি সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন একপাশে রেখে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘২০০৮ সালে প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগ দেয়ার আমন্ত্রণ জানান, যা ছিল রুশ ভালুকের চোখে খোঁচা দেয়ার সামিল। কার্যত ঐতিহাসিকভাবে নিবিড় সম্পর্ক এবং বিশাল রুশভাষী জনগোষ্ঠী থাকা ছাড়াও ইউক্রেন হলো রাশিয়ার ভূকৌশলগত কেন্দ্রভূমি। ওই সময় বুশের বেপরোয়া সেই প্রস্তাবে জার্মানি ও ফ্রান্স আপত্তি জানায়। এটি এখনো আলোচনার টেবিলে রয়েছে। নিশ্চয়ই গর্বাচেভের মতোই কোনো রুশ নেতা এটি মেনে নেবেন না।’ (ফেব্রুয়ারি ২০২২ সংখ্যা, রোজেনবার্গ ত্রৈমাসিক)

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার ২০১৪ সালের ৫ মার্চ ওয়াশিংটন পোস্টে লেখা কলামে পরামর্শ দিয়েছিলেন, ইউক্রেনের উচিত পশ্চিম ও পূর্বের মধ্যে সেতুবন্ধের ভূমিকা পালন করা, ‘দুই পক্ষের যুদ্ধক্ষেত্র’ হিসেবে নয়। এ ছাড়া আমেরিকার প্রখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও শিকাগো ইউনিভার্সিটির প্রফেসর জন মেয়ারশাইমার নিউইয়র্ক টাইমসে এক কলামে লিখেছিলেন, ‘ইউক্রেনকে বাঁচাতে এবং মস্কোর সাথে কার্যকর কাজের সম্পর্ক পুনরুদ্ধারে পশ্চিমের উচিত ইউক্রেনকে রাশিয়া ও ন্যাটোর মাঝখানে বাফার স্টেটে পরিণত করার চেষ্টা করা। শীতল যুদ্ধের সময় অস্ট্রিয়া যেমনটা ছিল। সেই লক্ষ্যে, পশ্চিমের উচিত ইউক্রেনকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটো সম্প্রসারণের বাইরে রাখা। (৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫, নিউ ইয়র্ক টাইমস)

দুর্ভাগ্য, যুক্তরাষ্ট্র ওই সব পরামর্শ গ্রাহ্য করেনি। বরং ইউক্রেনকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ক্রমাগত উসকানি ও প্ররোচনা দিয়েছে। অথচ ইউক্রেনকে ন্যাটো জোটে নেয়ার ব্যাপারে সংস্থাটির প্রভাবশালী কয়েকটি ইউরোপীয় সদস্যও একমত নয়। কারণ গ্যাসের জন্য ইউরোপ রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল। পুরো ইউরোপের প্রায় ৪৩ শতাংশ গ্যাস আসে রাশিয়া থেকে। আবার রুশ অর্থনীতি প্রধানত তেল-গ্যাস রফতানির ওপরই দাঁড়িয়ে আছে। সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিজ দেশে রাশিয়ার তেল-গ্যাস আমদানি নিষিদ্ধ করেছে।

একই পদক্ষেপ নিতে দেশটি ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোকে আহ্বান জানালেও তাতে সাড়া পায়নি। ইউরোপের ৩০ শতাংশ তেলও সরবরাহ করে রাশিয়া। অন্য দিকে, জার্মানির বৃহত্তম আর্থিক প্রতিষ্ঠান ‘ডয়েচে ব্যাংক’ রাশিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে একমত পোষণ করলেও এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলেছে, ‘সুইফট সিস্টেম থেকে রাশিয়াকে বাদ দেয়ায় একটি ‘অর্থনৈতিক বিপদ’ তৈরি হবে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য জটিল হয়ে উঠবে এবং অস্থিরতা তৈরি হবে।’ এ ছাড়া ব্যাংকটির ম্যাক্রো স্ট্র্যাটেজিস্ট মেরিয়ন লেবোওর সতর্ক করে বলেছেন, ‘এ নিষেধাজ্ঞা সুইফটের বিকল্প হিসেবে লেনদেনে পশ্চিমাবিরোধী দেশগুলোর নিজস্ব সিস্টেমগুলোর বিকাশ ত্বরান্বিত করতে পারে, যা নিষেধাজ্ঞাগুলো উতরে যাবে।’ (১১ মার্চ ২০২২, দ্য টেলিগ্রাফ, লন্ডন) এরই মধ্যে রাশিয়ান ব্যাংকগুলোর জন্য সুইফটের বিকল্প হিসেবে চাইনিজ ক্রস বর্ডার ইন্টারব্যাংক পেমেন্ট সিস্টেম (সিআইপিএস) প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে এটি সত্য, ইউক্রেন ইস্যুতে পশ্চিমাদের একের পর এক অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞায় রুশ অর্থনীতি লক্ষণীয়ভাবে বেকায়দায় পড়েছে। এর আগে ২০১৪ সালে ক্রাইমিয়া দখলের পর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মুখে বছরে রুশ অর্থনীতির ক্ষতি হয়েছে ৫০ বিলিয়ন ডলার করে। সুতরাং, সাম্প্রতিক সময়ে নতুন পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা মোকাবেলায় রাশিয়া ক্রিপ্টোকারেন্সি (ডিজিটাল কারেন্সি) ব্যবহার করতে পারে বলে জানিয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদন। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর জন্য রাশিয়ার কাছে ক্রিপ্টোকারেন্সির পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। রাশিয়ার শুধু বাণিজ্য করার এমন একটি পথ দরকার, যা ডলারের মুখাপেক্ষী নয়। এ ছাড়া নিষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়ায় পুতিন ঘোষণা দিয়েছেন, এখন থেকে ইউরোপকে রুশ মুদ্রা রুবলের বিনিময়ে রাশিয়া থেকে গ্যাস কিনতে হবে। এ ঘোষণার পর থেকে ডলার ও ইউরোর বিপরীতে রুবল দ্রুত শক্তিশালী হয়ে উঠছে। (২৪ মার্চ ২০২২, রয়টার্স) ফলে সুইফট সিস্টেম থেকে বাদ দেয়াসহ বিভিন্ন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দিলেও পশ্চিমাদের পক্ষে রাশিয়ার অর্থনীতিকে এত সহজে রুদ্ধ করা সম্ভব বলে মনে হয় না।

পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, রাশিয়ার সাথে সমঝোতা ছাড়া ইউক্রেনের কোনো বিকল্প থাকছে না। সে কারণে কিছুটা দেরিতে হলেও জেলেনস্কি ইউক্রেনকে ন্যাটোর অন্তর্ভুক্ত করার অবস্থান থেকে সরে এসেছেন বলে মনে হয়। ইতোমধ্যে তিনি বলেছেন, ‘ইউক্রেনকে গ্রহণে ন্যাটো প্রস্তুত নয়। রাশিয়ার সাথে সংঘর্ষে বা বিবাদে জড়াতে ভয় পাচ্ছে সামরিক জোটটি। তাই তার দেশ ন্যাটোতে আর যোগ দিতে চায় না।’ (৮ মার্চ ২০২২, এএফপি) এ ছাড়া জেলেনস্কি পূর্ব ইউক্রেনে রাশিয়া-প্রভাবিত দু’টি বিচ্ছিন্নতাবাদী অঞ্চলের (দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক) ব্যাপারেও ‘আপস’ করতে রাজি বলে জানিয়েছেন। ইউক্রেনে হামলার ঠিক আগে অঞ্চল দু’টিকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেয় রাশিয়া। হামলা বন্ধে পুতিনের মূল তিন শর্তের একটি হলো, ওই দু’টি অঞ্চলকে স্বাধীন হিসেবে এবং সেই সাথে ক্রিমিয়াকেও রাশিয়ার অংশ বলে ইউক্রেনকে মেনে নিতে হবে। আরেকটি শর্ত- ইউক্রেনকে সামরিক ক্ষেত্রে অস্ট্রিয়া ও সুইডেনের মতো নিউট্রাল তথা নিরপেক্ষ অবস্থান নিতে হবে। অর্থাৎ ইউক্রেনের নিজস্ব সেনাবাহিনী ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থাকলেও দেশটি কোনো সামরিক জোটে যুক্ত হতে পারবে না। নিজ ভূমিতে কোনো বিদেশী সামরিক ঘাঁটি গড়তে দেবে না। এ বিষয়ে উভয়পক্ষ আলোচনার মাধ্যমে একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে যাচ্ছে বলেও জানা গেছে। তবে অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় না, যুক্তরাষ্ট্র এত দ্রুত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ হতে দেবে। ইউক্রেন যুদ্ধের সুযোগে রাশিয়াকে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করতে চান বাইডেন। তা ছাড়া এ যুদ্ধের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র ব্যবসাও রমরমা হয়ে উঠেছে। বাইডেন আরো ৮০০ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র ইউক্রেনে পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছেন। (১৬ মার্চ ২০২২, ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব ডিফেন্স) রাশিয়ার ভয়ে ইতোমধ্যে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বহুগুণে বাড়িয়েছে। নিরাপত্তা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর আরো নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। সুতরাং এ যুদ্ধ যত প্রলম্বিত হবে, আমেরিকার প্রতিরক্ষা শিল্প খাত ততই ফুলে-ফেঁপে উঠবে।

বলাবাহুল্য, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে শীতলযুদ্ধ নবরূপে হাজির হয়েছে, যা গত শতকের স্নায়ুযুদ্ধকালীন দ্বি-মেরুকেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। যদিও সোভিয়েত-পরবর্তী মার্কিন নেতৃত্বাধীন এককেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থায় নয়া মেরুকরণের সূচনা হয় ২০১৫ সালের অক্টোবরে সিরিয়ার যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়ার প্রবল প্রতাপে অংশগ্রহণের পর থেকে। যাই হোক, ইউক্রেন ইস্যুতে ঠিক যখন রাশিয়াকে যুক্তরাষ্ট্র একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে, তখন মস্কোর কৌশলগত সহযোগী চীনের কাছে সৌদি আরব ডলারের পরিবর্তে চীনা মুদ্রা ইউয়ানের বিনিময়ে কিছু পরিমাণে তেল বিক্রি করতে রাজি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডলারের পরিবর্তে ইউয়ান বা অন্য কোনো মুদ্রায় মধ্যপ্রাচ্যের তেল বাণিজ্য শুরু হলে বৈশ্বিক পেট্রোলিয়াম বাজারে ডলারের আধিপত্য কমতে পারে। তেল বাণিজ্যে ডলারের বিকল্প মুদ্রা বা উপায় খোঁজার বিষয়টি আজকে নতুন নয়। ব্রিটিশ সাংবাদিক রবার্ট ফিস্ক ২০০৯ সালের ৪ মার্চ দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকায় এক কলামে লিখেছিলেন, সাম্প্রতিক মধ্যপ্রাচ্যের বাণিজ্যিক লেনদেনের ইতিহাসে উপসাগরীয় আরব দেশগুলো বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে ডলার বাদ দিয়ে ব্যাপকভিত্তিক পরিবর্তনের পরিকল্পনা করছে। চীন, রাশিয়া, জাপান ও ফ্রান্সের সাথে তেল বিক্রি করতে সৌদি আরব, আবুধাবি, কুয়েত, কাতারসহ উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের দেশগুলোর জন্য জাপানি ইয়েন, চীনা ইউয়ান, ইউরো, স্বর্ণ ও নতুন একটি একীভূত মুদ্রার কথা চিন্তা করছে।

সন্দেহ নেই, পেট্রোডলার ব্যবস্থার বিপর্যয় ঘটলে সেটি ওয়ার্ল্ড অর্ডারে আমেরিকাকে বেকায়দায় ফেলবে। এ ছাড়া ইউক্রেনের পক্ষে সমর্থন আদায়ে এবং রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার ফলে বিশ্ববাজারে তেলের মূল্যবৃদ্ধি রোধের ব্যাপারে বাইডেন ফোন করেছিলেন সৌদি আরব ও আরব আমিরাতকে। কিন্তু কেউই ফোন ধরেনি। (৮ মার্চ ২০২২, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল) এমনকি ভারত-পাকিস্তানও মার্কিন নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে রাশিয়ার সাথে গ্যাস ও তেল বাণিজ্য অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার মানে, বিশ্বব্যবস্থায় আমেরিকার একচেটিয়া কর্তৃত্ব ও আধিপত্য আর বজায় নেই, তা স্পষ্ট। অন্য দিকে আমেরিকার বিপরীতে অর্থনৈতিকভাবে চীনের নতুন বিশ্বশক্তি হয়ে ওঠা অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। নিকট ভবিষ্যতে বৈশ্বিক নেতৃত্ব আবারো দুই ব্লকে বিভাজিত হলে বিশ্বব্যবস্থার নতুন বিন্যাস ও রূপ অবধারিত হয়ে উঠবে।

লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877